ভাষার স্বাভাবিক বিবর্তন প্রক্রিয়ায় শব্দের অর্থ কখনো প্রসারিত হয়, কখনো সংকুচিত হয়। কখনো অর্থের উন্নতি ঘটে, কখনো অবনতি ঘটে। আবার শব্দ কখনো সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ গ্রহণ করে। অর্থের এসব পরিবর্তন প্রক্রিয়াকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
ক. অর্থপ্রসার: একটি শব্দ পূর্বে যে অর্থ প্রকাশ করতো, তার থেকে আরো ব্যাপক অর্থ প্রকাশ করলে বুঝতে হয় অর্থপ্রসার ঘটেছে। যেমন: 'অঞ্চল' শব্দের মূল অর্থ শাড়ির পাড়। অঞ্চল থেকে উদ্ভুত আঁচল শব্দটি এখনও তা নির্দেশ করে। তবে 'অঞ্চল' শব্দটি এখন শাড়ির পাড় নির্দেশের পাশাপাশি এলাকা অর্থে ব্যবহৃত হয়। একইভাবে 'বর্ষ' শব্দের পূর্ববর্তী অর্থ বর্ষাকাল, প্রসারিত অর্থ 'বছর' (ছয় ঋতু সংবলিত)।
খ. অর্থসংকোচ: অর্থসংকোচের ফলে একটি শব্দের পূর্ববর্তী অর্থের ব্যাপ্তি কমে। যেমন এক সময়ে 'মৃগ' শব্দের দ্বারা সকল পশুকে বোঝানো হতো। এর উদাহরণ পাওয়া যায় 'মৃগয়া', 'মৃগবাজ' প্রভৃতি শব্দের অর্থে। শব্দ দুটির অর্থ যথাক্রমে পশুশিকার ও পশুদের রাজা। কিন্তু অর্থ সংকোচনের ফলে 'মৃগ'র অর্থ দাঁড়িয়েছে কেবল হরিণ। আবার এক সময়ে 'অন্ন' বলতে বোঝানো হতো যে-কোনো খাদ্য (মিষ্টান্ন, পলান্ন)। কিন্তু এখন 'অন্ন' বলতে বোঝানো হয় ভাত।
গ. অর্থের উন্নতি: একটি শব্দের অর্থ আগের চেয়ে ভালো অর্থ ধারণ করতে পারে। অর্থের এরূপ পরিবর্তনকে বলা হয় অর্থের উন্নতি। যেমন 'অপরূপ' শব্দটি পূর্বে নির্দেশ করত শ্রীহীনতাকে, এখন এটি অনির্বচনীয় সৌন্দর্যকে নির্দেশ করে। কিংবা 'সাহস' শব্দের পূর্বতন অর্থ চুরি, ডাকাতি প্রভৃতি কাজ কিন্তু বর্তমান অর্থ নির্ভীকতা, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে উদ্যম।
ঘ. অর্থের অবনতি: ইতিবাচক অর্থের শব্দ নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হওয়াকে অর্থের অবনতি বলে। যেমন 'দ্বন্দ্ব' শব্দের অর্থ ছিল মিলন (দ্বন্দ্ব সমাস), এখন এর অর্থ বিবোধ। কিংবা 'জেঠামি' শব্দটি জেঠা-সংশ্লিষ্ট হয়ে সম্মানিত বোঝাতে পারত। কিন্তু তা ব্যবহৃত হয় 'পাকামি' অর্থে বা হেয়-অর্থে 'জ্যাঠার ভাব' বোঝাতে। বাংলাদেশে 'রাজাকার' শব্দটি এভাবে নেতিবাচক অর্থ লাভ করেছে।
ঙ. অর্থ-বদল: অর্থের সংকোচন ও প্রসারণের ফলে কখনো শব্দটির অর্থ এমন দূরবর্তী হয়ে ওঠে যে, তা থেকে শব্দটির মূল অর্থ উদ্ঘাটন করা কঠিন হয়ে পড়ে। 'পাষণ্ড' শব্দের অর্থ ছিল ধর্মসম্প্রদায়। তবে পরিবর্তিত হয়ে এর অর্থ দাঁড়িয়েছে ধর্মদ্রোহী উৎপীড়ক কিংবা নিষ্ঠুর। আবার 'গবাক্ষ' শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ গরুর চোখ। এখন 'গবাক্ষ' শব্দের অর্থ হয়েছে জানালা।