সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, পোয়েট অব পলিটিক্স, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতি ও দেশব্রতে যুক্ত হন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর আইন বিভাগে অধ্যয়ন করেন। ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি বহুবার কারাবরণ করেছেন। ১৯৫৬ সালে তিনি পূর্ববাংলার প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে দেশব্যাপী সফরের মাধ্যমে মানুষের মনে বাঙালি জাতীয়তাবোধ ও রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি করেন। বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে পরিচিত ছয় দফা দাবি উত্থাপন করে এক সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তুলে তিনি সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে অসহযোগের ডাক দেন তিনি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি ঘোষণা করেন, 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।'
বাঙালির মুক্তিসংগ্রামকে নস্যাৎ করার জন্যে ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পরে পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালির এই অবিসংবাদিত নেতাকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাঁকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি দেশে ফেরেন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার মহান দায়িত্বে ব্রতী হন। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবদ্দশায় কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন। বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাঙালি যিনি 1 ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দেন।
প্র. 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' সম্পর্কে কী জানেন?
উ. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনকাহিনী ভিত্তিক রচনা 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'। ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধুর হাতে লেখা চারটি খাতা আকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। মূল্যবান এ খাতাগুলিই পরবর্তীতে 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' নামে জুন, ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৬৬-১৯৬৯ সময়কালীন ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু তাঁর জন্ম, শৈশব ও কৈশোর থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক ঘটনাবলি লিখেছেন। এটি The Unfinished Memoirs নামে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 1 ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম। গ্রন্থটির ভূমিকা লিখেছেন শেখ হাসিনা এবং প্রচ্ছদ তৈরি করেছেন সমর মজুমদার।
প্র. 'কারাগারের রোজনামচা' গ্রন্থটি সম্পর্কে লিখুন।
উ. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাগারের জীবনকেন্দ্রিক রচনা 'কারাগারের রোজনামচা'। বঙ্গবন্ধু ১৯২৬ সালের ২ জুন থেকে ৬৭ সালের ২২ জুন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে ৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কুর্মিটোলা সেনানিবাসে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় প্রতিদিন ডায়েরি লিখতেন। সেই ডায়েরির পরিমার্জিত রূপ 'কারাগারের রোজনামচা'। গ্রন্থটির ভূমিকা লেখেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। 'কারাগারের রোজনামচা' গ্রন্থটি জাতির পিতার ৯৭তম জন্মদিন ১৭ মার্চ, ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়। 'কারাগারের রোজনামচা' নামটি প্রস্তাবক শেখ রেহানা। এটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম এবং প্রকাশ করেন বাংলা একাডেমি।
প্র. 'আমার দেখা নয়া চীন' গ্রন্থটি সম্পর্কে লিখুন।
উ. ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সালে বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের সম্পাদনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'আমার দেখা নয়া চীন' প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটির ভূমিকা লিখেছেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা; প্রচ্ছদ করেন তারিক সুজাত; প্রকাশ করেন বাংলা একাডেমি এবং ইংরেজিতে অনুবাদ করেন অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম। ২-১২ অক্টোবর, ১৯৫২ সালে গণচীনের পিকিংয়ে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়, যেখানে ভারত ও পাকিস্তানের ডেলিগেটরাও অংশ নেন। সেই সম্মেলনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আরো কয়েকজন অংশগ্রহণ করেন। এটি ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রথম চীন সফর। এই সফরে চীনের অবিসংবাদিত নেতা মাও সে তুং এর সাথে বঙ্গবন্ধুর দেখা হয়। এসময় তিনি চীনের রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন। এছাড়াও ১৯৫৭ সালে তিনি শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ-এইড দফতরের মন্ত্রী থাকাকালে পাকিস্তান সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে দ্বিতীয়বার চীন সফর করেন। চীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি ১৯৫৪ সালে কারাবন্দী থাকা অবস্থায় একটি ডায়েরি লেখেন। সেই ডায়েরি'র পরিমার্জিত রূপ 'আমার দেখা নয়া চীন'।
প্র. বঙ্গবন্ধুর অন্যান্য গ্রন্থসমূহের নাম কী কী?
উ. '৩০৫৩ দিন': এটি বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনের স্মৃতি নিয়ে দুর্লভ আলোকচিত্র সম্বলিত বই।
'আমার কিছু কথা': এটি মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা জাতির পিতার অমর গ্রন্থ।