প্রখ্যাত রম্য রচয়িতা, আজিজুল হক কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সৈয়দ মুজতবা আলী কর্মসূত্রে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের স্ফূরণ ঘটিয়েছেন তাঁর বিভিন্ন রচনায়। সাহিত্যিক রসবোধ, বিচিত্র জীবনপ্রবাহের নানা অনুষঙ্গ কৌতুক ও ব্যঙ্গ রসাবৃত করে উপস্থাপন তাঁর রচনার মূখ্য প্রবণতা। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে তাঁর ছিল বিশেষ পাণ্ডিত্য। তিনি প্রায় ১৮টি ভাষা জানতেন। ফলে তাঁর রচনায় প্রচুর আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহার করতেন।
প্র. মুজতবা আলীর বিখ্যাত ভ্রমণকাহিনীর নাম কী?
উ. 'দেশে-বিদেশে' (১৯৪৯): এটি তাঁর প্রথম গ্রন্থ। এতে কাবুল শহরের কাহিনী স্থান পেয়েছে।
'জলে ডাঙায়' (১৯৬০): এটি একাধারে ভ্রমণকাহিনী ও শিশু-কিশোর উপন্যাস।
প্র. মুজতবা আলীর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মসমূহ কী কী?
উপন্যাস: 'অবিশ্বাস্য' (১৯৫৪), 'শবনম' (১৯৬০), 'শহর- ইয়ার' (১৯৭০), 'তুলনাহীনা'।
রম্যরচনা: 'পঞ্চতন্ত্র' (১৯৫২), 'ময়ূরকণ্ঠী' (১৯৫২), 'বড়বাবু' (১৯৬৫), 'কত না অশ্রুজল' (১৯৭১)।
ছোটগল্প: 'চাচা-কাহিনী' (১৯৫২), 'টুনিমেম' (১৯৬৩), 'রসগোল্লা' (মূলগল্প: ইংরেজি Custom Housel, 'পাদটীকা', 'রাজা-উজির', 'ধূপছায়া'।
প্র. 'দেশে-বিদেশে' ভ্রমণকাহিনীর পরিচয় দাও।
উ. সৈয়দ মুজতবা আলীর প্রথম গ্রন্থ 'দেশে-বিদেশে' (১৯৪৯)। লেখক নিজে বিভিন্ন দেশে বিশেষত আফগানিস্তানের কাবুলে অবস্থান ও ভ্রমণ করে যে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন, তার পরিচয় অত্যন্ত সাবলীল ভাবে উপস্থাপন করেছেন এ গ্রন্থে। কাবুল শহরের রাজনৈতিক ঝড়ো হাওয়া, সাধারণ মানুষের জীবন, সাংস্কৃতিক জীবনের বিভিন্ন দিক, অপরিচিত দেশের নানা বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে আন্তরিক ভঙ্গিতে। কলকাতা থেকে পেশোয়ার হয়ে কাবুল যাওয়ার বর্ণনা দিয়ে শুরু এবং কাবুল ত্যাগের করুণ কাহিনীর মধ্য দিয়ে "বহুদিন ধরে সাবান ছিল না বলে আবদুর রহমানের পাগড়ি ময়লা। কিন্তু আমার মনে হয় চতুর্দিকের বরফের চেয়ে শুভ্রতর আবদুর রহমানের পাগড়ি আর শুভ্রতর আবদুর রহমানের হৃদয়।" এ বাক্যের মাধ্যমে কাহিনীর সমাপ্তি ঘটেছে। সাংবাদিক নজেস আফরোজ In a Land Far From Home: A Bengali in Afghanistan নামে এটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন।