ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন একাধারে বহুভাষাবিদ, পণ্ডিত, সাহিত্যিক, ধর্মবেত্তা ও শিক্ষাবিদ। বাংলা সাহিত্য সম্পর্কিত গবেষণার জন্য তাঁর নাম এদেশের সাহিত্যের ইতিহাসে অত্যুজ্জ্বল হয়ে আছে। সে জন্য তাঁকে 'জ্ঞানতাপস' অভিধায় অভিহিত করা হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর রাষ্ট্রভাষা বিতর্ক শুরু হলে তিনি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে জোরালো মত দেন। মধ্যজীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি ভাষাতত্ত্বচর্চা বাদ দিয়ে ইসলাম চর্চা ও তা প্রসারে আত্মনিয়োগ করেছিলেন।
প্র. ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর গবেষণামূলক গ্রন্থগুলো কী কী?
উ. 'বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান' (১৯৬৫): এটি বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত। এটি বাংলা ভাষার প্রথম আঞ্চলিক অভিধান। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উপভাষার একটি সংকলন গ্রন্থ।
Buddhist Mystic Songs (১৯৬০): এটি 'চর্যাপদ' বিষয়ক গবেষণা গ্রন্থ।
'সিদ্ধা কানুপার গীত ও দোহা' (১৯২৬), 'ভাষা ও সাহিত্য' (১৯৩১), 'বাংলা সাহিত্যের কথা' (১ম খণ্ড- ১৯৫৩, ২য় খণ্ড- ১৯৬৫), 'বাংলা ব্যাকরণ' (১৯৫৮), 'বৌদ্ধ মর্মবাদীর গান' (১৯৬০), 'বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত' (১৯৬৫)।
প্র. ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সাহিত্যকর্মসমূহ কী কী?
উ. প্রবন্ধ: 'ইকবাল' (১৯৪৫), 'Essays on Islam (১৯৪৫), 'আমাদের সমস্যা' (১৯৪৯), 'বাংলা আদব কি তারিখ' (১৯৫৭), 'Traditional Culture in East Pakistan' (১৯৬৩ সালে তিনি এটি মুহম্মদ আবদুল হাই সহযোগে রচনা করেন)।
অনুবাদ গ্রন্থ: 'দীওয়ানে হাফিজ' (১৯৩৮), 'মহানবী' (১৯৪০), 'অমিয়শতক' (১৯৪০), 'বাণী শিকওয়াহ' (১৯৪২), 'জওয়াব-ই-শিকওয়াহ' (১৯৪২), 'রুবাইয়াত-ই-ওমর খ্যায়াম' (১৯৪২), 'বাইঅতনামা' (১৯৪৮), 'বিদ্যাপতি শতক' (১৯৫৪), 'কুরআন প্রসঙ্গ' (১৯৬২), 'মহররম শরীফ' (১৯৬২), 'অমর কাব্য' (১৯৬৩), 'ইসলাম প্রসঙ্গ' (১৯৬৩)।
সম্পাদিত গ্রন্থ: 'পদ্মাবতী' (১৯৫০), 'প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে শেষ নবী' (১৯৫২)।
গল্পগ্রন্থ: 'রকমারি' (১৯৩১)।
শিশুতোষ গ্রন্থ: 'ছোটদের রসুলুল্লাহ' (১৯৬২), 'সেকালের রূপকথা' (১৯৬৫), 'শেষ নবীর সন্ধানে'।
বিখ্যাত উক্তি: '
প্র. ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ,র কর্মজীবন সম্পর্কে লিখ।
উ. ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ২ জুন, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। 'বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি'র (৪ সেপ্টেম্বর, ১৯১১) সম্পাদক (১৯১১-১৫)। ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমি কর্তৃক বাংলা পঞ্জিকা তারিখ বিন্যাস' কমিটির সভাপতি, বাংলা একাডেমি'র ইসলামি বিশ্বকোষ প্রকল্পের (১৯৬৪) সম্পাদক এবং পাকিস্তান এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ ও অধ্যাপক আবুল কাশেম সহযোগে মিরপুর বাংলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৪৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে অবসর গ্রহণ করে বগুড়া আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন এবং কলা অনুষদের ডিন ছিলেন।