সমকালীন সমাজে কালীপ্রসন্ন সিংহ শিল্পসংস্কৃতির একজন মহান পৃষ্ঠপোষক, বিধবাবিবাহের একনিষ্ঠ প্রবক্তা, অনন্যসাধারণ রাজনীতিবিদ ও দেশপ্রেমিক সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দীনবন্ধুর 'নীলদর্পণ' নাটক ইংরেজিতে অনুবাদ করে ছাপার দায়ে প্রকাশক রেভারেন্ড জেমস লঙ্ নামক এক পাদ্রীকে বিচারালয়ে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ২৪ জুলাই, ১৮৬১ সালে কালীপ্রসন্ন সিংহ বিচারালয়ে উপস্থিত হয়ে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করে পরোক্ষভাবে এ নাটকে ব্যক্ত বক্তব্যকে সমর্থন করেন।
প্র. কালীপ্রসন্ন সিংহের সাহিত্যকর্মসমূহ কী কী?
উ. 'হুতোম প্যাঁচার নকশা' (১৮৬২): এটি রম্য রচনা। তাঁর রচনার রীতিকে 'হুতোমী বাংলা' বলে। এ উপন্যাসের বিখ্যাত চরিত্র- দনুবানু।
'সংস্কৃত মহাভারতের গদ্য অনুবাদ' (১৮৬৬): এটি মহাভারতের আঠার পর্বের গদ্যাকারে অনুবাদ সম্পাদন করেন। অনুবাদটি মহারানি ভিক্টোরিয়াকে উৎসর্গ করেন।
নাটক: 'বাবু' (১৮৫৪- প্রহসন), 'বিক্রমোবশী' (১৮৫৭- অনুবাদ নাটক) 'সাবিত্রী সত্যবান' (১৮৫৮), 'মালতীমাধব' (১৮৫৯- অনুবাদ নাটক)।
প্র. 'হুতোম প্যাঁচার নকশা'র পরিচয় দাও।
উ. কালীপ্রসন্ন সিংহ রচিত 'হুতোম প্যাঁচার নকশা' (১৮৬২) একটি রম্য রচনা। তিনি এ নকশায় তৎকালীন সময়ের সমাজের ক্ষত চিহ্নের ছবি অত্যন্ত করুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি এতে কলকাতার হঠাৎ ধনী হওয়া নব্যসমাজের চিত্র ব্যঙ্গাকারে ফুটিয়ে তুলেছেন। এ গ্রন্থের বাচনভঙ্গি, রচনারীতি, আঙ্গিক প্রভৃতি দিক থেকে লেখক নতুনত্ব সৃষ্টি করেছেন। কালীপ্রসন্ন এ গ্রন্থে পণ্ডিতী (সংস্কৃত/সাধু) ভাষার পরিবর্তে কথ্য ভাষায় এটি রচনা করেন। তাঁর রচনার এ রীতিকে 'হুতোমি বাংলা' বলে। এটি উপন্যাস না হলেও উপন্যাস জাতীয় রচনা।
প্র. কালীপ্রসন্ন সিংহ প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম লিখ।
উ. 'বিদ্যোৎসাহিনী সভা' (১৮৫৩) (বঙ্গভাষা অনুশীলনের জন্য তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করেনা, 'বিদ্যোৎসাহিনী পত্রিকা' (১৮৫৫), 'বিদ্যোৎসাহিনী রঙ্গমঞ্চ' (১৮৫৬)।