বিহারীলাল চক্রবর্তী (১৮৩৫-১৮৯৪)

আধুনিক গীতিকবিতার কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী। কবির ব্যক্তিগত অনুভূতি ও গীতোচ্ছ্বাস বিশুদ্ধভাবে তাঁর কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে। সৌন্দর্যপিয়াসী প্রকৃতি প্রেমিক কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর কবিতায় সমাজ-সমকাল ও সমকালীন সমস্যাবলী প্রাধান্য পায়নি। মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রকৃতির রস আস্বাদন করেছেন যেভাবে, সেই মুগ্ধতার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর কবিতায়। তাঁর কবিতার চরণে চরণে ঢেউ তুলেছে নূপুর-নিক্কণ।

  • বিহারীলাল চক্রবর্তী ২৫ মে, ১৮৩৫ সালে কলকাতার জোড়াবাগান অঞ্চলের নিমতলায় জন্মগ্রহণ করেন। আদি নিবাস- ফরাসডাঙ্গায়।
  • তাঁর পারিবারিক পদবি- চট্টোপাধ্যায়।
  • গীতিকবিতার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের গুরু- বিহারীলাল চক্রবর্তী।
  • তিনি বাংলা সাহিত্যে আধুনিক গীতিকবিতার স্রষ্টা। এ জন্য রবীন্দ্রনাথ তাকে 'ভোরের পাখি' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
  • তিনি 'পূর্ণিমা' (১৮৫৯), 'সাহিত্য সংক্রান্তি' (১৮৬৩), 'অবোধ বন্ধু' (১৮৬৮) পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।
  • তিনি ২৪ মে, ১৮৯৪ সালে কলকাতায় মারা যান।

 

প্র. বিহারীলাল রচিত কাব্যগ্রন্থসমূহ কী কী? [৩৮তম বিসিএস লিখিত]

উ. 'বঙ্গসুন্দরী' (১৮৭০): এটি তাঁর প্রথম সার্থক গীতিকবিতার গ্রন্থ। এ কাব্যের বিখ্যাত উক্তি-

'সর্বদা হু হু করে মন / বিশ্ব যেন মরুর মতন 

চারিদিকে ঝালাফালা / উঃ কি জ্বলন্ত জ্বালা, 

অগ্নিকুণ্ডে পতঙ্গপতন।'

'সাধের আসন' (১৮৮৯): 'সারদামঙ্গল' কাব্যের পরিশিষ্ট 'সাধের আসন'। বিহারীলালের 'সারদামঙ্গল' কাব্য পড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বৌদি কাদম্বরী দেবী নিজের হাতে একটা আসন বুনে কবিকে উপহার দিয়েছিলেন। আসনের উপর প্রশ্নচ্ছলে কার্পেটের অক্ষরে লেখা ছিল 'সারদামঙ্গল' কাব্যের কয়েকটা লাইন। এর উত্তরে কবি রচনা করেন একটি কাব্য। কাদম্বরী দেবীর উপহারের কথা স্মরণ করেই বিহারীলাল এ কাব্যের নামকরণ করেন 'সাধের আসন'।

'স্বপ্নদর্শন' (১৮৫৮), 'সঙ্গীত শতক' (১৮৬২), নিসর্গ সন্দর্শন' (১৮৭০), 'বন্ধু বিয়োগ' (১৮৭০), 'প্রেম প্রবাহিণী' (১৮৭০), 'সারদামঙ্গল' (১৮৭৯), 'নিসর্গ সঙ্গীত' (১৮৮১), 'মায়াদেবী' (১৮৮২), 'দেবরাণী' (১৮৮২), 'বাউলবিংশতি' (১৮৮৭), 'ধূমকেতু' (১৮৯৯)।

প্র. বিহারীলালকে কি কারণে 'ভোরের পাখি' বলা হয়? [৩৮তম বিসিএস লিখিত]

উ. যে কবিতায় কবির একান্ত ব্যক্তিগত কামনা-বাসনা ও আনন্দবেদনা প্রাণের অন্তঃস্থল থেকে আবেগকম্পিত সুরে অখণ্ড ভাবমূর্তিতে আত্মপ্রকাশ করে তাকে 'গীতিকবিতা' বলে। আধুনিক বাংলা গীতিকবিতার সূত্রপাত টপ্পাগান থেকে। বিহারীলালই প্রথম বাংলায় ব্যক্তির আত্মলীনতা, ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি ও গীতোচ্ছ্বাস সহযোগে গীতিকবিতা রচনা করে নতুন এক ধারা সৃষ্টি করেন বলেই তাকে 'ভোরের পাখি' বলা হয়।

প্র. 'সারদামঙ্গল' কাব্যের পরিচয় দাও।

উ. বিহারীলালের শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ 'সারদামঙ্গল' (১৮৭৯)। এটি পাঁচ খণ্ডে স্তবকময় মাধুর্যপূর্ণ ভাষায় রচিত। এ কাব্যে দেখা যায়, শুরুতে কবির মনোজগতে এক কাব্যলক্ষ্মীর আবির্ভাব, লক্ষ্মীর উদ্দেশ্যে কবির মানসভ্রমণ, কবিচিত্তের দ্বন্দ্ব এবং হিমালয়ের উদার প্রকৃতির মধ্যে প্রশান্তি লাভ এবং সবশেষে হিমালয়ের পূর্ণভূমিতে কবির আনন্দ উপলব্ধির চিত্র। শেলির মতো বিহারীলালও তাঁর প্রিয়তমার মধ্যে সারদাকে অন্বেষণ করেছেন এবং দীর্ঘ বিরহের পর হিমাদ্রি শিখরে ভাব-সম্মিলনের চিত্র অংকন করে কবি কাব্যের পরিসমাপ্তি টেনেছেন।

Reference: অগ্রদূত বাংলা