বাংলা লিপি

বাংলা লিপি

বাংলা ভাষা যেমন বহু উত্থান- পতনের মধ্য দিয়ে বর্তমান রূপ লাভ করেছে, তেমনি বাংলা লিপিও নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমান রূপ পরিগ্রহ করেছে। লিপি হচ্ছে লিখন পদ্ধতি। পৃথিবীর প্রায় সকল লিপিই ফিনিশীয় লিপি থেকে উদ্ভব হয়েছে। প্রাচীন ভারতের প্রচলিত চিত্রলিপি থেকে ভারতীয় লিপির উৎপত্তি ঘটে। এ ভারতীয় লিপির রূপ দুইটি। যথা:

  • ব্রাহ্মী লিপি 
  • খরোষ্ঠী লিপি

এ ব্রাহ্মী লিপির কুটিল রূপ পূর্বী লিপি থেকে বাংলা লিপির উৎপত্তি। ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশনে প্রেস স্থাপিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সুদীর্ঘ সময়ে হাতে লেখা হয়েছে বলে বাংলা লিপি নানা পরিবর্তনের মাধ্যমে অগ্রসর হয়েছে। ছাপাখানার প্রভাবে বাংলা লিপি স্থায়ী রূপ লাভ করে এবং পরবর্তীকালে বাংলা লিপির আর তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।

 

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর

প্র. বাংলা লিপির উৎপত্তি কবে? 

উ.  ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, সপ্তম শতাব্দী। 

     ড. সুনীতিকুমারের মতে, দশম শতাব্দী।

প্র. ভারতীয় লিপির উৎপত্তি কোথা থেকে? 

উ. প্রাচীন ভারতের প্রচলিত চিত্রলিপি থেকে।

প্র. ভারতীয় লিপির রূপভেদগুলো কী কী? 

উ. ভারতীয় লিপির রূপ দুইটি। যথা:

  • ব্রাহ্মী লিপি 
  • খরোষ্ঠী লিপি।

প্র. ভারতের মৌলিক লিপি কোনটি? 

উ. ব্রাহ্মী লিপি। সকল ভারতীয় লিপি ব্রাহ্মী লিপি থেকে জন্মলাভ করেছে। বাংলা, সিংহলী, ব্রহ্মী, শ্যামী, যবদ্বীপ ও তিব্বতী লিপির উৎসও ব্রাহ্মী লিপি। ব্রাহ্মী লিপি বাম দিক থেকে লেখা হয় এবং খরোষ্ঠী লিপি ডানদিক থেকে লেখা শুরু হয়।  

প্র. 'ব্রাহ্মী' লিপি সম্পর্কে কী জান? 

উ. ভারতীয় উপমহাদেশে আর্য ভাষার প্রাচীনতম যে বর্ণমালার সন্ধান পাওয়া যায় তা খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকের, অশোকের অনুশাসনমালের। সম্রাট অশোক তাঁর অধিকাংশ কর্ম ব্রাহ্মী লিপিতে লেখান। বগুড়ার মহাস্থানগড়ে যে লিপি পাওয়া গেছে, তা উভয় প্রাপ্ত লিপির সাথে সাদৃশ্য আছে। এই লিপিকে ব্রাহ্মী লিপি বলে। ব্রাহ্মী লিপি কুষাণ ও গুপ্ত রাজাদের আমলে পরিবর্তিত হয়ে তিনটি রূপ ধারণ করে। যথা:

  • সারদা (কাশ্মির ও পাঞ্জাবে প্রচলিত রূপ), 
  • নাগর (রাজস্থান, মালব, গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশে প্রচলিত রূপ) 
  • কুটিল (ভারতের পূর্বাঞ্চলে প্রচলিত রূপ)।  

 

 

বাংলা লিপির উৎপত্তি ব্রাহ্মী লিপির কুটিল রূপ 'পূর্বী লিপি' থেকে। এ লিপিই বাংলা ভাষার নিজস্ব লিপি। পাল আমলে বাংলা লিপির প্রসার ঘটে ও সেন আমলে এর গঠন কাজ শুরু হয় এবং পাঠান যুগে এটি সাময়িক স্থায়িত্ব লাভ করে। ১৮০০ সালে শ্রীরামপুর মিশনে মুদ্রণযন্ত্র স্থাপনের মাধ্যমে বাংলা লিপির অক্ষর স্থায়ীত্ব লাভ করে। পঞ্চানন কর্মকার বাংলা লিপির অক্ষর বা বর্ণের আধুনিক রূপ প্রদান করেন। বাংলা লিপিতে মূল বর্ণের সংখ্যা ৫০টি (স্বরবর্ণ ১১টি, ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯টি)। অহমিয়া, বোড়ো, মণিপুরি প্রভৃতি ভাষাও বাংলা লিপিতে লেখা হয়। সংস্কৃত ও মৈথিলি ভাষা একসময়ে বাংলা লিপিতে লেখা হতো।

 

 

Reference: অগ্রদূত বাংলা