তাড়িত চৌম্বক আবেশ

তাড়িত চৌম্বক আবেশঃ

কোন তার বা তার কুণ্ডলীর কাছে আমরা যদি কোন চুম্বককে নাড়াচাড়া করি বা আনা নেওয়া করি বা কোন চুম্বকের নিকট কোন তার কুণ্ডলীকে আনা নেওয়া করি, তাহলে তার কুণ্ডলীতে তড়িৎপ্রবাহ উৎপন্ন করে। একে তাড়িতচৌম্বক আবেশ বলে। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডেকে তাড়িতচৌম্বক আবেশের আবিষ্কর্তা বলা হয় ।

জেনারেটর বা ডায়নামো (Generator or Dynamo) : যে তড়িৎ যন্ত্রে যান্ত্রিক শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়, তাকে জেনারেটর বলা হয়। তাড়িত চৌম্বক আবেশের উপর ভিত্তি করে এই যন্ত্রের মূলনীতি প্রতিষ্ঠিত। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম জেনারেটর উদ্ভাবন করেন। জেনারেটর সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা- (ক) এ.সি. জেনারেটর (খ) ডি.সি. জেনারেটর।

বৈদ্যুতিক মোটর (Electric Motor):

আবেশের ওপর ভিত্তি করে বৈদ্যুতিক মোটর তৈরি করা হয়েছে। বৈদ্যুতিক

মোটর দুই প্রকার। যথা-

ক) ডিসি মোটর: ক্ষেত্র চুম্বক, আর্মেচার, কমুটেটর এবং ব্রাশ দিয়ে তৈরি করা হয়।

খ) এসি মোটর

ডিসি মোটরঃ

রূপান্তরক বা ট্রান্সফর্মার (Transformer) : যে যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চ বিভবকে নিম্ন বিভবে বা নিম্ন বিভবকে উচ্চ বিভবে রূপান্তরিত করা হয় তাকে ট্রান্সফর্মার বলে । তাড়িত চৌম্বক আবেশের উপর ভিত্তি করে এই যন্ত্র তৈরি করা হয়। ট্রান্সফর্মার ভোল্টেজ এবং তড়িৎপ্রবাহ উভয়কেই রূপান্তর করে।

ট্রান্সফর্মার দুই প্রকার। যথা:

ক) উচ্চধাপী বা আরোহী বা স্টেপ আপ ট্রান্সফর্মার (নিম্নতর ভোল্ট → উচ্চতর ভোল্ট) : ইহা অল্প বিভবের অধিক তড়িৎ প্রবাহকে অধিক বিভবের অল্প তড়িৎ প্রবাহে রূপান্তরিত করে। দূরদূরান্তে তড়িৎ প্রেরণের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।

খ) নিম্নধাপী বা অবরোহী বা স্টেপ ডাউন ট্রান্সফর্মার (উচ্চতর ভোল্ট -নিম্নতর ভোল্ট): ইহা অধিক বিভবের অল্প তড়িৎ প্রবাহকে অল্প বিভবের অধিক তড়িৎ প্রবাহে রূপান্তরিত করে। নিম্ন ভোল্টেজ ব্যবহারকারী যন্ত্রপাতি যেমন; রেডিও, টেলিভিশন,টেপরেকর্ডার, ভিসি আর, ভিসিপি, ইলেকট্রিক ঘড়ি, ওয়াকম্যান ইত্যাদির জন্য এটি ব্যবহৃত হয় ।

দূর-দূরান্তে তড়িৎ প্রেরণঃ

পাওয়ার স্টেশনে তড়িৎ উৎপাদন করা হয়। তড়িৎকে পাওয়ার স্টেশন থেকে একটি প্রেরণ ব্যবস্থার মাধ্যমে সারাদেশে পাঠানো হয়। এই ব্যবস্থায় পাওয়ার স্টেশনগুলো পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে । এই ব্যবস্থার নাম জাতীয় গ্রীড। তড়িৎ প্রেরণ করা হয় তারের মাধ্যমে। এ সব তার উঁচু টাওয়ারের মাধ্যমে টানানো থাকে। প্রেরক তারে যে রোধ থাকে তা খুব সামান্য কিন্তু এই রোধ তাৎপর্যপূর্ণ। রোধের কারণে তড়িৎ প্রবাহের সময় তড়িৎ শক্তি তাপ শক্তি হিসাবে অপচয় হয়। দূরত্ব যত বেশি হয়, অপচয়ও তত বেশি হয়। এজন্য অধিক দূরত্বে তড়িৎ প্রেরণের সময় অপচয় রোধকল্পে আরোহী বা স্টেপআপ ট্রাসফর্মারের সাহায্যে তড়িৎ প্রবাহ কমিয়ে ভোল্টেজ বাড়ানো হয় । এজন্য টাওয়ারের তারে উচ্চভোল্টেজের তড়িৎ থাকে, কিন্তু তড়িৎ প্রবাহের মান কম থাকে । 

উচ্চ ভোল্টেজ এবং কম মানের তড়িৎ প্রবাহ গ্রাহকের ব্যবহার উপযোগী নয়। তাই এই ভোল্টেজ আবার অনেকগুলো অবরোহী বা নিম্নধাপী ট্রান্সফর্মারের মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়। এতে ভোল্টেজ কমে যায় এবং তড়িৎ প্রবাহের মান বৃদ্ধি পায়। ফলে তড়িৎ গ্রাহকের উপযোগী হয়। বাংলাদেশে উচ্চ ভোল্টেজকে কমিয়ে ২২০ V নিয়ে আসা হয়।

Reference: MP3 বিজ্ঞান