যে জনন প্রক্রিয়ায় দুটো ভিন্নধর্মী জনন কোষের মিলন ছাড়াই সম্পন্ন হয় তাই অযৌন প্রজনন। অযৌন প্রজনন প্রধানত দুই প্রকার। যথা- স্পোর উৎপাদন এবং অঙ্গজ প্রজনন ।
(১) স্পোর উৎপাদন : নিম্ন শ্রেণীর অপুষ্পক উদ্ভিদ যেমন- শৈবাল, ছত্রাক, মস এবং ফার্ন স্পোর বা অণুবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে বংশ রক্ষা করে।
(২) অঙ্গজ প্রজনন : কোনো ধরনের অযৌন জনন কোষ সৃষ্টি না করে দেহের অংশ খণ্ডিত হয়ে বা কোনো অঙ্গ রূপান্তরিত হয়ে যে জনন ঘটে তাকে অঙ্গজ জনন বলে। অঙ্গজ প্রজননকে স্বাভাবিক ও
কৃত্রিম এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
(১) প্রাকৃতিক অঙ্গজ প্রজনন : বিভিন্ন পদ্ধতিতে স্বাভাবিক নিয়মেই এ ধরনের অঙ্গজ জনন দেখা যায় । যথা-
দেহের খণ্ডায়ন : Spirogyra, Mucor ইত্যাদি।
মূলের মাধ্যমে : মিষ্টি আলু, ডালিয়া, কাঁকরোল, পটল ইত্যাদি।
(২) রূপান্তরিত কাণ্ডের মাধ্যমে : আলু, আদা, হলুদ, সটি, পিঁয়াজ, রসুন, কচু, পুদিনা, কচুরি পানা, কলা, আনারস, চুপড়ি আলু ।
কিছু কিছু উদ্ভিদে মাটির নিচের শাখার অগ্রভাগে খাদ্য সঞ্চয়ের ফলে স্ফীত হয়ে কন্দের সৃষ্টি করে, এদের টিউবার বলে। কন্দের গায়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গর্ত থাকে। এগুলো দেখতে চোখের মতো। তাই এদের চোখ বলা হয়। প্রতিটি চোখ থেকে একটি স্বাধীন উদ্ভিদের জন্ম হয়, যেমন- গোল আলু ।
পাতার মাধ্যমে : পাথরকুচি।
(২) কৃত্রিম অঙ্গজ প্রজননঃ কৃত্রিম উপায়ে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে কৃত্রিম অঙ্গজ প্রজনন বলে। কলম- কাটিং, লেয়ারিং, বাডিং ইত্যাদি পদ্ধতিতে কৃত্রিম অঙ্গজ প্রজনন ঘটানো যায়।
১) কলম (Grafting) : কলম করার জন্য প্রথমে একটি সুস্থ গাছের কচি ও সতেজ শাখা নির্বাচন করা হয়। উপযুক্ত স্থানে বাকল সামান্য কেটে নিতে হয়। এবার ঐ ক্ষতস্থানটি মাটি ও গোবর মিশিয়ে ভালোভাবে আবৃত করে দিতে হয়। এবার সেলোফেন টেপ বা পলিথিন দিয়ে মুড়ে দিতে হবে যাতে পানি লেগে মাটি খসে না পড়ে। এভাবে কিছুদিন রেখে দিলে এ স্থানে মূল গজাবে। এর পরে মূলসহ শাখার এ অংশটি মাতৃউদ্ভিদ থেকে কেটে নিয়ে মাটিতে রোপন করে দিলে নতুন একটি উদ্ভিদ হিসেবে গড়ে উঠবে।
২) কাটিং : গোলাপের একটি ডাল নিয়ে ভেজা মাটিতে পুঁতে দিলে কিছুদিনের মধ্যেই তা থেকে নতুন কুড়ি উৎপন্ন হয়। এ সব কুড়ি বড় হয়ে একটি নতুন গোলাপ গাছ উৎপন্ন করে । কোনো গাছের শিকড়, ডাল বা পাতা থেকে যে নতুন চারা গাছ গজায়, তাকে দাবা কলম বলে।