ক্রিকেট

ক্রিকেট

Cricket শব্দের অর্থ ঝিঁঝিঁ পোকা। প্রকৃত অর্থে ক্রিকেট হলো দু'টি দলের মধ্যে ব্যাট ও বলের খেলা। ইংল্যান্ডের মাটি থেকে রস আহরণ করে ক্রিকেটের বিরাট মহীরুহ আজ বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করেছে।

ক) খেলার নিয়মাবলী

খেলার আইন

১৭৪৪ কোড                ক্রিকেট খেলার নিয়মাবলী বিধিবদ্ধ হয়।

১৭৭৪ কোড              'নোবেলমেন এন্ড জেন্টলমেন' কমিটি কর্তৃক নিয়মাবলী সংশোধিত হয়।

১৭৮৮ কোড             ১৭৮৭ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৮৮ সালে ক্লাবটি                                              সংশোধিত ক্রিকেট আইন প্রকাশ করে।

খেলোয়াড় ও আম্পায়ার: ক্রিকেট ২টি দলের মধ্যে ব্যাট ও বলের খেলা। প্রত্যেক দলে ১১ জন করে খেলোয়াড় থাকে। মাঠে খেলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন দুইজন আম্পায়ার। মাঠের বাইরে থাকেন থার্ড আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারি। নিখুঁত সিদ্ধান্তের জন্য তারা প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে থাকেন।

জয়-পরাজয়: ক্রিকেট খেলার জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় রান বা উইকেটে। খেলায় ব্যাটিং পক্ষের উদ্দেশ্য থাকে ফিল্ডিং বেষ্টনীকে ফাঁকি দিয়ে বল মেরে রান সংগ্রহ করা। আর বোলিং পক্ষের লক্ষ্য হয় প্রতিপক্ষের ব্যাটারকে যতটা সম্ভব রান নিতে না দেওয়া এবং ব্যাটারকে আউট করা। একজন ব্যাটারকে ১০ উপায়ে আউট করা যায়। কিন্তু নো-বল (আইন বহির্ভূত বল) এ ব্যাটারকে তিনটি উপায়ে আউট করা যায়। যথা- ব্রান আউট, Hit the ball twice অথবা Obstructing the field। হ্যাটট্রিক হলো একজন বোলার তিনজন ভিন্ন ব্যাটারকে পরপর তিন বলে আউট করার স্বীকৃতি। ব্যাটার বলকে ব্যাট দ্বারা আঘাত করতে ব্যর্থ হলেও যে রান সংগ্রহ করে তা 'বাই' (bye) হিসাবে ধরা হয়। কোনো রান ছাড়াই বল সম্পন্ন হলে তা 'ডট বল' হিসাবে লিখিত হয়। নির্দিষ্ট ওভারে দুই দলে স্কোর সমান হয়ে গেলে খেলা টাই হয়ে যায়। ক্রিকেটের টাই ব্রেকিং পদ্ধতি হলো সুপার ওভার। আবহাওয়াজনিত কারণে খেলা বিঘ্নিত হলে ডাকওয়ার্থ- লুইস (Duckworth-Lewis Method) পদ্ধতিতে খেলার ফলাফল নির্ধারিত হয়। বৃষ্টি বিঘ্নিত জিম্বাবুয়ে ও ইংল্যান্ডের একদিনের আন্তর্জাতিক সিরিজে ১৯৯৭ সালে প্রথম ডার্কওয়ার্থ- লুইস পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

খ) নিয়ন্ত্রক সংস্থা

International Cricket Council (ICC) বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা। ১৫ জুন, ১৯০৯ সালে ইংল্যান্ডের লর্ডসে Imperial Cricket Conference (ICC) নামে এর যাত্রা শুরু। বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে সংস্থাটির সদর দপ্তর। আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশ ১২ টি। যথা- ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশ (১০তম), আয়ারল্যান্ড (১১তম) এবং আফগানিস্তান (১২তম)। ২২ জুন, ২০১৭ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত আইসিসির সভায় আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড সংস্থাটির পূর্ণ সদস্য পদ লাভ করে।

গ) খেলার ধরন

১) টেস্ট ক্রিকেট আইসিসি'র পূর্ণ সদস্য দেশ টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে পারে। টেস্ট ক্রিকেট সাধারণত ৫ দিনে হয়। প্রতি দল দু'টি করে ইনিংস খেলে।

১৫ - ১৯ মার্চ, ১৮৭৭ অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত প্রথম টেস্টম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ৪৫ রানে জয়লাভ করে।

নিজেদের শততম টেস্ট ম্যাচে জয় লাভ করে অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ।

অ্যাশেজ বা দি অ্যাশেজ (The Ashes) ক্রিকেটের ট্রফিবিশেষ। ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজ বিজয়ী দলকে ১৮৮২ সাল থেকে এ ট্রফি প্রদান করা হয়। ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ইংরেজ ক্রিকেট দল অস্ট্রেলিয়ার কাছে ওভালে পরাভূত হলে ইংরেজরা বিদ্রূপাত্মকভাবে শোক প্রকাশ করে। এ প্রেক্ষিতেই ধারাবাহিকভাবে ইংরেজরা একটি ছাইপূর্ণ পাত্র উপস্থাপন করে যা পরবর্তীতে ট্রফির মর্যাদা লাভ করে।

২) এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট: এক দিনের আন্তর্জাতিকে দুই দল ৫০ ওভার (১ ওভার = ৬টি বৈধ বল) করে ব্যাটিং করে থাকে। খেলায় প্রথম দশ ওভার দুইজন ফিল্ডার ৩০ গজের বাইরে থাকতে পারে। ৫ জানুয়ারি, ১৯৭১ মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের খেলার মধ্য দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয়। খেলায় অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে জয়ী হয়।

৩) টুয়েন্টি ২০: টুয়েন্টি ২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার নবীনতম সংস্করণ। এখানে প্রতিটি দল ২০ ওভার করে ব্যাটিং করে। খেলায় একজন বোলার সর্বোচ্চ চার (৪) ওভার বোলিং  করতে পারে। ইংল্যান্ডে টুয়েন্টি২০ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার শুভ সূচনা ঘটে এবং ২০০৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক টুয়েন্টি ২০ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ।

ঘ) আন্তর্জাতিক আসর

ক্রিকেট বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হলেও এখনও বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া ভর অনুষ্ঠান অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্ত হয় নি।

১) আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ: ১৯৭৫ সালের ৭ জুন প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর্দা ওঠে। প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড। এরপর থেকে প্রতি ৪ বছর পরপর বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম আসরের ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। লর্ডসে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৭ রানে অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে শিরোপা অর্জন করে এবং ক্লাইভ লয়েড ৮৫ বলে ১০২ রান করে ম্যাচ সেরা (Man of the Match) নির্বাচিত হন। ৫টি শিরোপা জিতে বিশ্বকাপের সফলতম দল অস্ট্রেলিয়া। আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিক করেন ভারতের চেতন শর্মা।

২) আইসিসি টি২০ বিশ্বকাপ: ২০০৭ সালে আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি ২০ প্রতিযোগিতার প্রথম আসর অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। ফাইনাল খেলায় ভারত ৫ রানে প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে পরাজিত করে শিরোপা জয় করে। টি২০ বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিক করেন অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লি।

৩) আইসিসি চ্যাম্পিয়ন ট্রফি: আইসিসি চ্যাম্পিয়ন ট্রফি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) কর্তৃক আয়োজিত একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রতিযোগিতা। মর্যাদার দিক থেকে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পরেই আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অবস্থান। ১৯৯৮ সালে প্রতিযোগিতাটির প্রথম আসর (আইসিসি নক-আউট টুর্নামেন্ট নামে) বসে ঢাকায়। দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪ উইকেটে পরাভূত করে প্রথম শিরোপা জয় করে। দুইবার করে শিরোপা জিতে অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত টুর্নামেন্টের সফলতম দল।

ঙ) বিখ্যাত ক্রিকেটার

ডন ব্রাডম্যান (অস্ট্রেলিয়া) টেস্টে সর্বাধিক (১২টি) ডাবল - সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন। তাঁর ব্যাটিং গড় ৯৯.৯৪।

ব্রায়ান লারা (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) ১৯৯৪ সালে ডারহাম এর বিপক্ষে ৫০১ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন। এটি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ।

কোর্টনি ওয়ালস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ৫০০ উইকেট শিকারি।

ক্লাইভ লয়েড (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপ শিরোপাজয়ী অধিনায়ক।

ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) ওডিআই বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথম দ্বিশতক রানের অধিকারী। টি২০ ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটার হিসাবে ১০,০০০ রান করেন। তাঁর আত্মজীবনী 'Six Machine - I don't like cricket, I love it' (২০১৬)।

শচীন টেন্ডুলকার (ভারত) একদিনের ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা ৪.' ক্রিকেটার। 'লিটল মাস্টার' নামে খ্যাত। ১৯৮৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয়। ২০১৩ সালে নিজ শহর মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিদায়ি টেস্ট খেলেন। প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে ওয়ানডেতে অপরাজিত ২০০ রান করেন (প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০১০ খ্রি.)। ওডিআই (৪৯টি) ও টেস্টম্যাচ (৫১টি) ৬. মিলিয়ে মোট ১০০টি শতক করেন। তিনি ভারতের বেসামরিক পদক পদ্মশ্রী (১৯৯৯ খ্রি.), পদ্মবিভূষণ (২০০৮ খ্রি.) এবং ভারতরত্ন (২০১৪ খ্রি.) উপাধি লাভ করেন। তাঁর আত্মজীবনী - Playing It My Way 1

ইমরান খান (পাকিস্তান) 'অক্সফোর্ড ব্লু' নামে পরিচিত। তিনি ছিলেন পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী (২০১৮-২০২২ খ্রি.)।

মোহাম্মদ ইউসুফ (পাকিস্তান) টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এক Calender year এ সর্বাধিক ১৭৮৮ রান সংগ্রহ করেন।

জালাল উদ্দিন (পাকিস্তান) একদিনের ক্রিকেটে প্রথম হ্যাটট্রিককারী বোলার। ১৯৮২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এ স্বীকৃতি অর্জন করে।

শোয়েব আখতার (পাকিস্তান) ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ঘণ্টায় ১৬১.৩ কিমি. (১০০.২২ মাইল) গতিতে বল করেন। এটি ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ গতির বল।

জ্যাক ক্যালিস (দক্ষিণ আফ্রিকা) একজন অলরাউন্ডার।

রিচার্ড হ্যাডলি (নিউজিল্যান্ড) একজন অলরাউন্ডার।

নাসের হোসেন ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ।

Reference: জর্জ MP3 আন্তর্জা‌তিক