বৌদ্ধধর্ম
গৌতম বুদ্ধের জীবনী (খ্রিষ্টপূর্ব ৫৬০ - ৪৮০)
বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক হলেন সিদ্ধার্থ গৌতম। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে বুদ্ধদেব হিমালয়ের পাদদেশে নেপালের কপিলাবস্তুর লুম্বিনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শুদ্ধোদন ও মায়ের নাম মহামায়া। পিতামাতা তাঁর নাম রাখেন গৌতম। বাল্যকালে তাঁর নাম ছিল সিদ্ধার্থ। শাক্যরাজ বংশে জন্ম বলে তিনি 'শাক্যসিংহ' নামেও পরিচিত। তিনি ২৯ বছর বয়সে গৃহত্যাগ করেন। নৈরঞ্জনা নদীর তীরে অশ্বত্থ গাছের নিচে শুরু করেন কঠোর ধ্যান-সাধনা। যে গাছের নিচে বসে তিনি ধ্যান করেছিলেন সে গাছটির নাম রাখা হয় 'বোধিবৃক্ষ'। স্থানটির নাম রাখা হয় 'বুদ্ধগয়া'। অবশেষে বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে লাভ করেন বুদ্ধত্ব, জগতে তিনি খ্যাত হন 'বুদ্ধ' নামে। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল পয়ত্রিশ বছর। গৌতমবুদ্ধ আশি বছর বয়সে কুশিনারার শালবনে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন।
মূলনীতি: বৌদ্ধ ধর্মে কোন জাতিভেদ নেই। এ ধর্মের মূলকথা হচ্ছে অহিংসা গৌতম বুদ্ধ পরম ধর্ম। বুদ্ধ মানুষকে পঞ্চশীল পালনের উপদেশ দিয়ে গেছেন। পঞ্চ শব্দের অর্থ পাঁচ এবং শীল শব্দের অর্থ স্বভাব বা চরিত্র। এ পঞ্চশীল হচ্ছে জীব হত্যা না করা, চুরি না করা, মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকা, মিথ্যা কামাচারে বশীভূত না হওয়া, মদ্যাসক্ত না হওয়া। বুদ্ধের মতে, মানুষের দুঃখের কারণ হল 'আসক্তি' বা 'তৃষ্ণা'। কোন কিছু পাওয়ার আশা করার নামই আসক্তি। আসক্তির অবসান হলে দুঃখ থেকে মুক্তি আসবে। দুঃখ থেকে মুক্তির নাম 'নির্বাণ লাভ'। কারও কারও মতে, 'নির্বাণ লাভ' হলো কর্ম বা জন্মের অনন্ত ধারার পরিসমাপ্তি। বুদ্ধ নির্দেশিত নির্বাণে উপনীত হতে যে মহৎ মার্গ বা উপায় অবলম্বন করা হয়। তারই নাম মহাযান। নির্বাণ লাভের উপায় হল 'মধ্যম পন্থা' বা মধ্যপথ অনুসরণ করা। বুদ্ধ নির্দেশিত মধ্যপথ ৮টি। যথা-১ সম্যক দৃষ্টি ২) সম্যক সংকল্প ৩) সম্যক বাক্য ৪) সম্যক কর্ম ৫) সম্যক জীবিকা ৬) সম্যক ব্যায়াম বা প্রচেষ্টা ৭) সম্যক স্মৃতি এবং ৮) সম্যক সমাধি।
উপাসনালয়: পালি ভাষায় রচিত ত্রিপিটক বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। বুদ্ধগয়া ও সারনাথ তাদের পবিত্র তীর্থস্থান। বৌদ্ধদের উপাসনালয়কে বলা হয় বৌদ্ধবিহার বা প্যাগোডা বা কিয়াং। বোরোবিদুর বুদ্ধ মন্দির ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে অবস্থিত নবম শতাব্দীর একটি প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির ।