কাশ্মীর

কাশ্মীর

পাক-ভারত যুদ্ধ (১৯৪৭- ৪৮ খ্রি.): ভারত বিভক্তির সময় কাশ্মীর ছিল হিন্দুরাজা শাসিত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি করদ রাজ্য। ভারতের স্বাধীনতা আইন, ১৯৪৭ এ বলা ছিল, কাশ্মীর তার ইচ্ছে অনুযায়ী ভারত অথবা পাকিস্তান যে কোনো রাষ্ট্রেই যোগ দিতে পারবে। কাশ্মীরের তৎকালীন হিন্দু মহারাজা হরি সিং চেয়েছিলেন স্বাধীন থ কিতে অথবা ভারতের সাথে যোগ দিতে। অন্যদিকে কাশ্মীরের মুসলিম জনগোষ্ঠী চেয়েছিল পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে। কাশ্মীরি মুসলিমদের সাহায্যে এগিয়ে আসে পাকিস্তানের উপজাতি সম্প্রদায়। পাকিস্তানের পাশতুন উপজাতীয় বাহিনীগুলোর কাশ্মীরের শেষ রাজা হরি সিং আক্রমণের মুখে ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর হরি সিং ভারতভুক্তির চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ভারতীয় সেনারা কাশ্মীরে প্রবেশ করে। শুরু হয় পাক-ভারত যুদ্ধ। পরে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে ঘোষিত হয় যুদ্ধবিরতি। ১৯৪৯-এ জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতি রেখা, ১৯৭২-এ সিমলা চুক্তির পর নিয়ন্ত্রণ রেখা (Line of Control - LoC) এ পরিণত হয়। কাশ্মীর পাকিস্তান ও ভারত নিয়ন্ত্রিত দুই অংশে ভাগ হয়ে যায় । 

চীন-ভারত যুদ্ধ (১৯৬২)ঃ ৩টি কারণে এই যুদ্ধ সংঘটিত। হয়। যথা-

• আকসাই-চীন তিব্বত ও চীনের জিনজিয়াং এর মাঝে অবস্থিত একটি সুউচ্চ মরুভূমি। আকসাই চীন এবং কাশ্মীরের লাদাখ অংশ বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ। ১৮৬৫ সালে 'জনসন লাইন' এর মাধ্যমে আকসাই-চীনকে লাদাখের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। চীন জনসন লাইনকে কখনও স্বীকৃতি দেয়নি এবং স্বভাবতই আকসাই-চীনকে ভারতের অংশ হিসেবে মেনে নেয় নি।

• ১৯১৪ সালে ম্যাকমোহন লাইন (McMahon Line) এর মাধ্যমে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও তিব্বতের মধ্যে সীমানা টানা হয়। এতে অরুণাচল ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। চীন ম্যাকমোহন লাইন মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং অরুণাচল প্রদেশকে দক্ষিণ তিব্বত হিসেবে মনে করে।

• চীন তিব্বতের স্বাধীন অস্তিত্ব কোনো দিন স্বীকার করেনি। ১৯৫১ সালে চীন তিব্বত অধিগ্রহণ করে। ১৯৫৯ সালে তিব্বতের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা চতুর্দশ দালাই লামা (প্রকৃত নাম: তেনজিন গিয়াতসো) চৈনিক শাসনযন্ত্রের বিরুদ্ধে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেন। এতে ভারতের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয় চীন।

১৯৬২ সালে ভারত আক্রমণ করে চীন। আকসাই-চীন ও অরুণাচলে ঢুকে পড়ে চীনা People's Liberation Army। যুদ্ধে চীন জয়ী হয়ে একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। আকসাই-চীন দখলে রাখে কিন্তু অরুণাচল ভারতকে ফিরিয়ে দেয়। আকসাই চীন আর লাদাখের মধ্যবর্তী গালওয়ান উপত্যকায় নির্ধারিত হয় দুই দেশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (Line of Actual Control)। এ সময় পাকিস্তান চীনের সঙ্গে মিত্রতা বাড়াতে সচেষ্ট হয়। ১৯৬৩ সালে কাশ্মীরের ট্রান্স-কারাকোরাম অঞ্চলটি চীনের হাতে ছেড়ে দেয় পাকিস্তান। 

পাক-ভারত যুদ্ধ (১৯৬৫)ঃ ভারত-পাকিস্তান আবারো কাশ্মীর সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। অতঃপর জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে উভয় পক্ষের যুদ্ধবিরতি যুদ্ধবিরতি ঘটে। সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী কোসিগিনের আমন্ত্রণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ১৯৬৬ সালের ১০ জানুয়ারি সোভিয়েত উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে একটি শান্তি চুক্তি (তাসখন্দ চুক্তি) সই করেন।

চীন-ভারত যুদ্ধ (১৯৬৭): নাথু লা পাস ফ্রন্টে ভারত ও চীনেরমধ্যে মৃদু সংঘর্ষ হয়। নাথু লা পাস গিরিপথটি সিকিম (ভারত) ও তিব্বত (চীন) সীমান্তে অবস্থিত। 

সিয়াচেন দ্বন্দ্ব: ১৯৮৪ সালে ভারত সিয়াচেন হিমবাহ এলাকার নিয়ন্ত্রণ দখল করে যা নিয়ন্ত্রণরেখা দিয়ে চিহ্নিত নয়।

JKLF এর উত্থান: কাশ্মীরে বিদ্রোহী তৎপরতা বড় আকারেশুরু হয় ১৯৮৭ সালে বিতর্কিত স্থানীয় নির্বাচনের পর JKLF (Jammu Kashmir Liberation Front) নামে সংগঠনের উত্থানের মধ্যে দিয়ে।

কারগিল সংকট (১৯৯৯): পাকিস্তানি সেনা এবং জঙ্গিরা নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে কার্গিল পর্বতে ভারতের একটি সামরিক চৌকি দখল করে নেয়। ভারত বিমান এবং সেনা অভিযান শুরু করার পর দখলকারীরা পিছু হটে যায়।

মুম্বাই জঙ্গি হামলা (২০০৮): ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের রাজধানী  মুম্বাইয়ের প্রধান রেলওয়ে স্টেশন, বিলাসবহুল একটি হোটেল এবং একটি ইহুদি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালায় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ (২০১৯): ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫এ অনুচ্ছেদের অধীনে জম্মু ও কাশ্মীর বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা ভোগ করতো। প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীরে হস্তক্ষেপ করতে পারতো না। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার ঘোর বিরোধী ছিল। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট, বিজেপি সরকার জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা রদ করে রাজ্যটিকে ভেঙে কেন্দ্রশাসিত দুটি অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখে বিভক্ত করে।

কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ বর্তমানে ভারত, পাকিস্তান ও চীন - এই তিন দশের মধ্যে ভাগ হয়ে গেছে। ভারতের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে  কাশ্মীর উপত্যকা, লাদাখ এবং সিয়াচেন হিমবাহ। পাকিস্তানের অধীনে রয়েছে আজাদ কাশ্মীর ও গিলগিট-বালতিস্তান এবং চীনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আকসাই-চীন এবং ট্রান্স কারাকোরাম ট্রাক্ট।

 

Reference: জর্জ MP3 আন্তর্জা‌তিক