ভূমিকম্প ভূ-পৃষ্ঠে সংঘটিত আকস্মিক ও অস্থায়ী কম্পন। ভূ-অভ্যন্তরস্থ শিলারাশিতে সঞ্চিত শক্তির আকস্মিক অবমুক্তির কারণে সৃষ্ঠ এই স্পন্দনের মাত্রা মৃদু কম্পন থেকে প্রচণ্ড ঘূর্ণনের মধ্যে হতে পারে। ভূমিকম্প পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই সংঘঠিত হয়। ভূমিকম্প হচ্ছে তরঙ্গ গতির এক ধরনের শক্তি, যা সীমিত পরিসরে উদ্ভূত হয়ে ঘটনার উৎস থেকে সকল দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভূমিকম্পের ফলে আড় বা অনুপ্রস্থ Transverse) এবং লম্বিক বা অনুদৈর্ঘ্য (Longitudinal) উভয় ধরনের তরঙ্গ তৈরি হয়। স্থলভাগের যে বিন্দুতে ভূমিকম্পের তরঙ্গ সূচিত হয় তাকে কেন্দ্র বলে এবং এই কেন্দ্র থেকে স্পন্দন সকল দিকে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম এটি কেন্দ্রের ঠিক উপরের বিন্দু বরাবর ভূ-পৃষ্ঠে অনুভূত হয় যাকে উপকেন্দ্র (epicentre) বলে। এই উপকেন্দ্রেই ভূমিকম্পের প্রথম ঝাঁকি অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের প্রধান কারণগুলো হল- ভিত্তিশিলা চ্যুতি বা ফাটল, ভূ-পাত, তাপ বিকিরণ, ভূ-গর্ভস্থ বাষ্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ভূ-গর্ভস্থ চাপের হ্রাস, হিমবাহের প্রভাব এবং ভূ-পৃষ্ঠের চাপ বৃদ্ধি।
সিসমোগ্রাফঃ ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট কম্পন বা কম্পনের ঢেউ রেকর্ড করা হয় সিসমোমিটার দিয়ে। ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট কম্পনের মাত্রা দিয়ে যে রেখাচিত্র তৈরি করা হয় তাকে বলা হয় সিসমোগ্রাফ। এই সিসমোগ্রাফ থেকে পাওয়া তথ্য ও রেখাচিত্র বিশ্লেষণ করে গাণিতিকভাবে ভূমিকম্পকে মাপা হয় রিখটার স্কেলের মাধ্যমে। সিসমোমিটারে রেকর্ড হওয়া ভূকম্পনের বিস্তার, ভূকম্পনের উৎপত্তিস্থল হতে সিসমোমিটারের দূরত্ব এবং ভূকম্পনের স্থায়িত্ব এসব বিবেচনা করে রিখটার স্কেলে ভূকম্পনের তীব্রতা পরিমাপ করা হয়। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা পরিমাপ করা যায় ০ হতে ১০ মাত্রা পর্যন্ত । ১৯৩৫ সালে মার্কিন ভূকম্প ও পদার্থবিদ চার্লস এফ রিখটার ভূমিকম্পের তীব্রতা পরিমাপের এই স্কেল আবিষ্কার করেন বলে তার নামানুসারে এই স্কেলের নামকরণ করা হয়েছে রিখটার স্কেল।
ভূমিকম্পের প্রবণতাঃ বিশ্বের ধ্বংসাত্মক প্রায় সকল ভূমিকম্প দুটি সুপরিচিত অঞ্চল বা বলয়ে উদ্ভূত হতে দেখা যায়। যেমন- দি সারকাম-প্যাসিফিক বেল্ট বা প্রশান্ত মহাসাগরীয় বলয় এবং ভূ-মধ্যসাগরীয় হিমালয় ভূকম্পনীয় বলয়। প্রশান্ত মহাসাগরের বহিঃসীমানা বরাবর ভূমিকম্পের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। এ অংশের জাপান, ফিলিপাইন, চিলি, অ্যালিউসিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, আলাস্কা সবচেয়ে ভূকম্পন প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। জাপানকে ভূমিকম্পের দেশ বলা হয় । ইউরিশিয়ান প্লেট, ইন্ডিয়ান প্লেট ও বার্মা প্লেটের মাঝামাঝি হওয়ায় বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত। বাংলাদেশে মাত্র একটি ভূমিকম্প রেকর্ড কেন্দ্র বা ভূমিকম্পন মানমন্দির রয়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগ চট্টগ্রাম শহরে ১৯৫৪ সালে কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করে।
২০০৩- ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহাসিক বাম নগরীতে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়।
২০১৫- (২৫ এপ্রিল) শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে নেপালে। এ ভূমিকম্প বাংলাদেশ, উত্তর ভারত, চীনের তিব্বত অঞ্চল এবং পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকায় অনুভূত হয়। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল কাঠমান্ডু থেকে ৮১ কি.মি. উত্তর-পশ্চিম এবং পর্যটন নগরী পোখারা হতে ৮০ কি.মি.পূর্বে অবস্থিত গান্ধাকি জোনের ‘লামজুং’ জেলায় । রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৭.৮ । এ ভূমিকম্পটি পোখরা ভূমিকম্প নামে পরিচিত।