জ্যোতিষ্কমণ্ডলী

বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যাবতীয় বস্তুর শক্তি যে অঞ্চলে ভাসমান অবস্থায় বিন্যস্ত তার নাম মহাকাশ। মহাশূন্যে অবস্থিত বস্তুসমূহকে জ্যোতিষ্ক বলা হয়ে থাকে। জ্যোতিষ্ক ৭ প্রকার। যথা- নক্ষত্র, গ্যালাক্সি, গ্রহ, উপগ্রহ, ছায়াপথ, ধূমকেতু এবং উল্কা। 

নক্ষত্রঃ  রাত্রিবেলা মেঘমুক্ত আকাশের দিকে তাকালে অনেক আলোক বিন্দু মিটমিট করে জ্বলতে দেখা যায়, এদের নক্ষত্র বলে। নক্ষত্রগুলো প্রকৃতপক্ষে জলন্ত গ্যাসপিণ্ড এবং এদের নিজস্ব আলো ও উত্তাপ আছে। মহাবিশ্বের নক্ষত্রগুলোকে তাদের আলোর তীব্রতা অনুসারে লাল, নীল ও হলুদ এই তিনটি বর্নে ভাগ করা হয়েছে। অতি বৃহৎ নক্ষত্রের রং লাল, মাঝারি নক্ষত্রের রং হলুদ এবং ছোট নক্ষত্রের নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টারাই (Proxima Centauri)। প্রক্সিমা সেন্টারাই পৃথিবীর দ্বিতীয় নীল হয়ে থাকে। আকাশে উজ্জ্বলতম নক্ষত্র লুব্ধক। পৃথিবীর নিকটতম নক্ষত্র সূর্য। সূর্যের  নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টারাই। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৪.২৪ আলোকবর্ষ। প্রক্সিমা সেন্টারাই (অন্য নাম আলফা সেন্টাউরি C) নক্ষত্রটি আলফা সেন্টরাই নক্ষত্রপুঞ্জের অংশ।

রক্তিম দৈত্যঃ নক্ষত্রের জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে নক্ষত্রের বহির্ভাগের প্রসারণ শুরু হয়। এই পর্যায়ে তারকার ঔজ্জ্বল্য বেড়ে যায় বহুগুণ। নক্ষত্রের জীবন প্রবাহের তৃতীয় এই ধাপকে বলা হয় রক্তিম দৈত্য।

কৃষ্ণগহবর (Black hole) : তিন সৌর ভরের সমান বা বেশি ভরের নক্ষত্রের সুপার নোভা বিস্ফোরণের পর এর অন্তর্বস্তু অনির্দিষ্টভাবে সংকুচিত হতে থাকে। সংকোচনের কারণে আয়তন প্রায় শূন্য এবং ঘনত্ব প্রায় অসীম হওয়ায় মহাকর্ষ ক্ষেত্র এমন প্রবল হয় যে, এ জাতীয় বস্তু থেকে এর মহাকর্ষকে কাটিয়ে কোনো প্রকার আলো বা সংকেতও বেরিয়ে আসতে পারে না । নক্ষত্রের এই অবস্থাকে বলা হয় কৃষ্ণবিবর। জার্মান পদার্থবিদ আইনস্টাইনের ‘জেনারেল থিউরি অব রিলেটিভিটি' (১৯১৫ খ্রি.)-তে কৃষ্ণগহ্বরের গঠন সম্পর্কে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এই তত্ত্বে তিনি মহাকর্ষীয় তরঙ্গের ধারণা দেন । দুটি ব্ল্যাকহোল মিলিত হলে অশান্ত ব্ল্যাকহোল তৈরি হয়, সেখান থেকে আসে বৃত্তায়িত মহাকর্ষ  তরঙ্গ। ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের লাইগোর (LIGO - Laser Interferometer Gravitational-Wave Observatory) সনাক্তকারক যন্ত্রে একটা সংকেত আসে। এটি ছিল ১৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের দুটি ব্ল্যাকহোলের মিলনের ফলে সৃষ্ট মহাকর্ষীয় তরঙ্গের সংকেত। মহাকার্ষীয় তরঙ্গ সনাক্তকারী গবেষক দলের সদস্য ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পাবনা জেলার সেলিম শাহরিয়ার এবং বরগুনার দীপঙ্কর তালুকদার। দীপঙ্কর তালুকদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো একটি কৃষ্ণগহবরের ছবি তুলতে সক্ষম বিজ্ঞানীরা। ছবিটি ধারণ করে ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ। ব্যাকহোলটি মেসিয়ার ৮৭ গ্যালাক্সি কেন্দ্রে অবস্থিত ।

নক্ষত্রমণ্ডলীঃ মেঘমুক্ত অন্ধকার রাতে আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় কতকগুলো নক্ষত্র মিলে জোট বেঁধেছে। এরূপ নক্ষত্রদলকে নক্ষত্রমণ্ডলী বলে । প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এক একটি নক্ষত্রদলকে কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করে বিভিন্ন আকৃতি কল্পনা করে এগুলোকে বিভিন্ন নাম দিয়েছেন। যেমন- সপ্তর্ষিমণ্ডল (Great Bear), কালপুরুষ (Orion) বা আদমসুরত, ক্যাসিওপির (Cassiopeia), লঘুসপ্তর্ষি (Little Bear), বৃহৎ কুক্কুরমণ্ডল বা যুগল মণ্ডল (Canis Major) এরিডানাস (Eridanus) উল্লেখযোগ্য। উত্তর আকাশের কাছাকাছি যে সাতটি উজ্জ্বল নক্ষত্র দেখ যায়, তার নাম সপ্তর্ষিমণ্ডল। সাতজন ঋষির নাম অনুসারে এরা পরিচিত। জ্যামিতিক রেখা দিয়ে এদের যুক্ত করলে প্রশ্নবোধক (?) চিহ্নের মত দেখায়। কালপুরুষকে তীর ধনুক হাতে শিকারির মতে দেখায়। কালপুরুষকে আদমসুরত বলা হয় ।

Reference: MP3 বিজ্ঞান