ক) আইন ও শাসন বিভাগের সম্পর্কের ভিত্তিতে সরকার
১) রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার (Presidential Govern-১ ment): রাষ্ট্রপতি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। রাষ্ট্রপতি একাধারে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান। আইনসভা নিরঙ্কুশ ক্ষমত- ার অধিকারী নয়। রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিসভার সদস্যগণ আইনসভার সদস্য নন। মন্ত্রিগণ তাদের কাজের জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট দায়ী থাকেন। যুক্তরাষ্ট্র, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রে এরূপ প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান।
২) সংসদীয় সরকার (Parliamentary or Cabinet Government): আইনসভা সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।ম প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার হাতে থাকে দেশের প্রকৃত শাসন ক্ষমতা। প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিস- ডা তাদের কাজের জন্য আইন পরিষদের নিকট দায়ী থাকেন। এ ধরনের সরকারে একজন নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান থাকেন। রাষ্ট্রপ্রধান প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া কার্যত কিছু করেন না। বাং- লাদেশ, ভারত, জার্মানি ও নিউজিল্যান্ডসহ প্রভৃতি রাষ্ট্রে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার রয়েছে।
খ) ক্ষমতা বণ্টনের নীতির ভিত্তিতে সরকার
১) এককেন্দ্রিক সরকার (Unitary Government): যে শাসন ব্যবস্থায় সাংবিধানিকভাবে সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে এবং একটি কেন্দ্র থেকে সকল ক্ষমতা পরিচালিত হয়, তাকে এককেন্দ্রিক সরকার বলে। ফ্রান্স, বাংলাদেশ, জাপান, ইতালি প্রভৃতি দেশে এককেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে।
২) যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার (Federal Government): যখন কতিপয় স্বাধীন রাষ্ট্র পরস্পর বিচ্ছিন্ন না থেকে পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে একটি স্বাধীন সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধীনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নতুন রাষ্ট্র গঠন করে, তখন তাকে যুক্তরাষ্ট্র বলে। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার একটি দ্বৈত সরকার। এখানে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার বিদ্যমান। এতে সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার কিছু অংশ প্রদেশ বা আঞ্চলিক সরকারের এবং জাতীয় বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকে। ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা প্রভৃতি দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার পদ্ধতি বিদ্যমান।
গ) ক্ষমতার উৎসের ভিত্তিতে সরকার
১) একনায়কতন্ত্র (Dictatorship): গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার। বিপরীত শাসন ব্যবস্থার নাম হলো একনায়কতন্ত্র। একনায়কতন্ত্র এক ব্যক্তি বা এক দলের শাসন। একনায়কতন্ত্র এক ধরনের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। স্বৈরশাসক (Autocrat) সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে না।
২) গণতন্ত্র: গণতন্ত্রের ইংরেজি শব্দ Democracy শব্দটি গ্রিক শব্দ 'Demos' এবং 'Kratos' থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ জনগণ ও শাসনক্ষমতা। অর্থাৎ গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের শাসন ক্ষমতা। নির্বাচন হলো গণতন্ত্রের মূলভিত্তি। গণতন্ত্রের মূল কথা হলো নাগরিক বা জনসাধারণের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। নির্বাচন হলো জনমত প্রকাশের প্রধান ও বিধিসম্মত প্রক্রিয়া।
সুতরাং নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র চলতে পারে না। প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মূলভিত্তি রাজনৈতিক দল যার মাধ্যমে সরকার গঠিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে। গণতন্ত্রে একাধিক রাজনৈতিক দলকে লালন করা হয় এবং অপরিহার্য বিরোধী রাজনৈতিক দল 'বিকল্প সরকার' হিসাবে কাজ করে।
গণতন্ত্র সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষীর উক্তি
মিল গণতন্ত্র শ্রেষ্ঠ ও উৎকৃষ্ট শাসন ব্যবস্থা।
লর্ড ব্রাইস গণতন্ত্রই সর্বোৎকৃষ্ট শাসন ব্যবস্থা।
বার্কার 'গণতন্ত্র মানে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পরিচালিত সরকার'।
আব্রাহাম লিঙ্কন 'Democracy is a government of the people, by the people and for the people' (গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের কল্যাণের জন্য, জনগণের দ্বারা পরিচালিত, জনপ্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থা)
আইভর জেনিংস 'If there is no opposition, there is no democracy' (যেখানে বিরোধী দল নেই সেখানে গণতন্ত্র অনুপস্থিত)
গ্রিক দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিস্টটল রাজতন্ত্র ও অভিজাততন্ত্রকে স্বাভাবিক সরকার অপরদিকে স্বৈরতন্ত্র, ধনিকতন্ত্র বা কুলীনতন্ত্র এবং গণতন্ত্র বা জনতাতন্ত্রকে বিকৃত সরকার হিসাবে অভিহিত করেছেন।
উল্লেখযোগ্য মাইলফলক -
•গণতন্ত্রের সূচনা হয় গ্রিসের নগররাষ্ট্র এথেন্সে। গ্রিসকে গণতন্ত্রের সূতিকাগার বলা হয়।
• বিশ্বের প্রাচীনতম গণতন্ত্র প্রচলিত আছে যুক্তরাজ্যে।
• বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারত।
•সুইজারল্যান্ডে সর্বপ্রথম সরাসরি গণতন্ত্র (Direct Democracy) এর প্রচলন হয়।
•তিয়েন আনমেন স্কোয়ার হত্যাকাণ্ড (৪ জুন, ১৯৮৯): বেইজিং এর তিয়েন আনমেন স্কোয়ারে ছাত্র- বুদ্ধিজীবীরা অধিক গণতন্ত্র এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার দাবিতে সমবেত হয়। চীনের সরকার এই সমাবেশে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায় ।