বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও প্রযুক্তির উন্নতি
চতুর্দশ শতকে ইউরোপে যে নব জাগরণের সূত্রপাত হয় তখন থেকে নতুন করে শুরু হয় বিজ্ঞান চর্চা। বলা যেতে পারে এই সময় থেকে শুরু হয় আধুনিক বিজ্ঞান অনুশীলন, অধ্যয়ন এবং গবেষণা। যে ক'জন বিজ্ঞানী এই যুগের বিজ্ঞান চর্চার গোড়াপত্তন করেন, তাদের বিবরণ নিম্নে প্রদত্ত হলো-
জোহানেস গুটেনবার্গ (১৪০০-১৪৬৮ খ্রি.): জার্মানির গুটেনবার্গ আধুনিক সিসার টাইপ আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কার মুদ্রণ শিল্পের জগতে এক ব্যাপক পরিবর্তন আনয়ন ১৯। গুটেনবার্গের মুদ্রণ যন্ত্র দ্বারা ১৪৫৪-৫৬ সালে প্রথম বাইবেল মুদ্রিত হয়। গুটেনবার্গের আবিষ্কারের ফলে বাইবেল সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে যায়। ১৪৭৬ সালে গুটেনবার্গের আবিষ্কারটি ইংল্যান্ডে নিয়ে এসেছিলেন উইলিয়াম ক্যাক্সটন নামে একজন ইংরেজ। তিনি ছিলেন ইংল্যান্ডে মুদ্রণযন্ত্র প্রবর্তনকারী প্রথম ব্যক্তি।
নিকোলাস কপারনিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩ খ্রি.) কে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের স্থপতি (founder of modern astronomy) বলা হয়। মধ্যযুগের ইউরোপে এই মতই প্রচলিত ছিল যে, পৃথিবী কেন্দ্র করে সূর্য ও অন্যান্য গ্রহ নক্ষত্র আবর্তিত হচ্ছে। কপারনিকাস ইউরোপবাসীর এই ধারণা ভুল প্রমাণ করেন। তিনি আবিষ্কার করেন যে, পৃথিবী সূর্যকে প্রতিনিয়ত প্রদক্ষিণ করে চলেছে। প্রাচীন গ্রিক বিজ্ঞানীদেরও এই ধারণা হয়েছিল। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় অব্দে গ্রিক জ্যোতির্বিদ অ্যারিস্টর্কাস প্রথম প্রস্তাব করেন, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে পরিভ্রমণ করিতেছে কিন্তু অ্যারিস্টর্কাস এর কথাও মানুষ বিশ্বাস করেনি। কোপার্নিকাস তাঁর মতবাদটি প্রমাণ করে যেতে পারেন নি।
গ্যালিলিও (১৫৬৪ - ১৬৪২ খ্রি.) ছিলেন একজন ইতালীয় পদার্থবিদ, জ্যোর্তিবিদ এবং গণিতবিদ। তাঁকে আধুনিক বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উন্নয়নের মাধ্যমে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি কোপার্নিকাসের মতবাদটি সঠিক বলে প্রমাণ করেন। সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের সমর্থক হওয়ার কারণে গ্যালিলিও চার্চের কোপানলে পড়েছিলেন এবং শেষ জীবনে তাঁকে গৃহবন্দী হয়ে কাটাতে হয়।