সিন্ধু সভ্যতা

সিন্ধু সভ্যতা (The Indus Civilization)

পটভূমিঃ সিন্ধু সভ্যতা ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে পুরানো সভ্যতা। সিন্ধু নদের অববাহিকায় গড়ে উঠেছিল বলে এটি ‘সিন্ধু  সভ্যতা’ নামে পরিচিত। এ জনগোষ্ঠী বেশ কয়েকটি শহর গড়ে তুলেছিল । সিন্ধু সভ্যতার শেষ দুটি শহর ছিল হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো। হরপ্পা নগরীরী গড়ে উঠেছিল সিন্দু উপনদী রাভীর তীরে। কিছু সভ্যতার সংস্কৃতিকে অনেক সময় হরপ্পা সংস্কৃতি বা হরপ্পা সভ্যতা বলা হয়ে থাকে আর সিন্ধুনদের তীরে গড়ে উঠেছিল মহেঞ্জোদারো নগরী। সিন্ধি ভাষায় 'মহেঞ্জোদারো' শব্দের অর্থ হলো মৃতের ঢিবি। শহর বা নগরকেন্দ্রিক ছিল বলে এ সভ্যতাকে বলা হয় নগরসভ্যতা ।

সময়কাল: সিন্ধু সভ্যতা ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতা । সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা লৌহার ব্যবহার জানত না। সিন্দু  সভ্যতার সময়কাল নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ কেউ মনে করেন, ৩৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত এ সভ্যতার উত্থান-পতনের কাল । কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করেন, আর্য জাতির আক্রমণের ফলে খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ বা খ্রিষ্টপূর্ব ১৪০০ অব্দে সিন্ধু সভ্যতার অবসান ঘটে । এ সত্যতা কারা গড়ে তুলেছিল এ সম্পর্কে পন্ডিতগণ একমত নন। সাধারণত ধারণা করা হয়, দ্রাবিড় জাতি এ সভ্যতা গড়ে তুলেছিল ।

আবিষ্কারঃ ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধিকর্তা আলেকজন্ডার ক্যানিংহাম ১৯৭৫ সালে প্রথম হারপ্পা লিপিতে লেখা একটি পাথরের সীলমোহরের স্কেচ প্রকাশ করেন। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে দয়ারাম সাহালীর প্রচেষ্টায় বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সাহিওয়াল জেলার হরপ্পা নামক স্থানে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়। ১৯২২ সালে বাঙালি প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলায় মহেঞ্জোদারো মহেঞ্জোদারো নগরীর ধবংসাবেশ আবিষ্কার করেন। অপ্রতাশিতভাবে বেরিয়ে আসে তাম্রযুগের যুগের নিদর্শন। এ সময় স্যার জন মার্সাল ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মহাপরিচালত ছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় এই দুই অঞ্চলে ব্যাপক খননকার্য হয়। সিন্ধু সভ্যতা আবিষ্কারে তিনজন প্রত্নতাত্ত্বিক বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন তাঁরা হলেন কাশীনাথ দীক্ষিত, মনী গোপাল মজুমদার এবং স্যার মর্টিমার হুইলার।

অর্থনৈতিক অবস্থাঃ সিন্ধু সভ্যতার বেশিরভাগ লোক কৃষিকাজ করত ।

সিন্ধু সভ্যতার অবদানঃ

নাখার পরিকল্পনা: সিন্ধু সভাভায় এক অভিজাত ও নগরাঞ্চলীয় সংস্কৃতির প্রমাণ পাওয়া যায়। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো দুটি শহরেই পাকা নর্দমা ছিল। শহরে রাস্তার দুপাশে দোতলা তিনতলা বাড়ি ছিল। প্রতি বাড়িতে ছিল চৌবাচ্চাসহ গোসলখানা ও কৃপ। 

পরিমাপ পদ্ধতিঃ সিন্ধু সভ্যতা যুগের অধিবাসীরা দ্রব্যের ওজন পরিমাপ করতে শিখেছিল। দ্রব্য ওজনের জন্য নগরবাসী বিভিন্ন পরিমাপের বাটখারা ব্যবহার করত । দৈৰ্ঘ্য পরিমাপের জন্য তারা বিভিন্ন স্কেল ব্যবহার করত।

সীলমোহরঃ মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পায় হাড় ও পাথরের তৈরি সীলমোহর পাওয়া গেছে। সিন্ধু সভ্যতায় পাওয়া মাটির পাত্রের সাথে মেসোপটেমীয়ার মাটির পাত্রের মিল আছে। সিন্ধুর সীল সুমেরীয় ও ব্যবলীয় সভ্যতার বিভিন্ন প্রত্নস্থলে পাওয়া গেছে ।

Reference: জর্জ MP3 আন্তর্জা‌তিক