নদনদী
যে নদী সবচেয়ে বেশিপথ অতিক্রম করে, সে দীর্ঘতম নদী (Longest river)। পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী নীল নদ। বৃহত্তম নদী (Largest river) বিচার করা হয় যে নদীতে প্রতি সেকেন্ডে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ পানি প্রবাহিত হয় তাকে। পৃথিবীর বৃহত্তম নদী হচ্ছে আমাজন (২০৯০০০ ঘনমিটার পানি প্রতি সেকেন্ডে প্রবাহিত হয়)।
নীল নদ (Nile)
নীল নদ এর দৈর্ঘ্য ৬৬৯০ কি.মি.। এর দুইটি উপনদী রয়েছে, হোয়াইট নাইল এবং ব্লু নাইল। এর মধ্যে হোয়াইট নাইল দীর্ঘতর। হোয়াইট নাইল আফ্রিকার মধ্যভাগের হ্রদ অঞ্চল হতে উৎপন্ন হয়েছে। এর সর্ব দক্ষিণের উৎস হলো রুয়ান্ডাতে এবং এটি এখান থেকে উত্তর দিকে ভিক্টোরিয়া হ্রদের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ভিক্টোরিয়া হ্রদ কেনিয়া-তাঞ্জানিয়া-উগান্ডা ত্রিদেশীয় সীমান্তে অবস্থিত আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম হ্রদ। অন্যদিকে, ব্ল নাইল ইথিওপিয়ার তানা হ্রদ হতে উৎপন্ন হয়েছে। দুইটি উপনদী সুদানের রাজধানী খার্তুমের নিকট মিলিত হয়েছে। নীলের উত্তরাংশ সুদানে শুরু হয়ে মিশরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিশাল ব-দ্বীপ সৃষ্টি করে ভূমধ্যসাগরে গিয়ে মিশেছে। মিশরের। রাজধানী কায়রো নীলনদের ব-দ্বীপের শীর্ষভাগে অবস্থিত। নীল নদ আফ্রিকার মোট ১১টি দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। যথা- রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, উগান্ডা, তাঞ্জানিয়া, কেনিয়া, গণতান্ত্রিক কঙ্গো, ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া, দক্ষিণ সুদান, সুদান এবং মিশর।
আমাজন নদী (Amazon River)
আমাজন বিশ্বের প্রশস্ততম নদী। বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। আমাজন নদী আন্দিজ পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে ৬৩৮৭ কি.মি. পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার ৬টি দেশ (পেরু, বলিভিয়া, ভেনিজুয়েলা, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর এবং ব্রাজিল) বিধৌত হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে গিয়ে পড়েছে।
মিসিসিপি - মিসৌরি
মিসিসিপি-মিসৌরি যুক্তরাষ্ট্র তথা উত্তর আমেরিকার দীর্ঘতম নদী। মিসিসিপির প্রধান উপনদী মিসৌরি। মিসিসিপি-মিসৌরির একত্রে দৈর্ঘ্য ৬২৭৫ কি.মি. (মতান্তরে ৮০৯৫ কি.মি.)। মিসৌরি- মিসিসিপির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইসে মিলিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্স, মেফিস প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ শহর মিসিসিপি নদীর তীরে অবস্থিত।
ইয়াংসিকিয়াং (Yangtze)
ইয়াংসিকিয়াং এশিয়ার দীর্ঘতম নদী। দৈর্ঘ্য ৬৩৮০ কিমি। এটি তিকাতের মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে পূর্ব চীন সাগরে পতিত হয়েছে।
ইয়াংসিকিয়াং (Yangtze)
ইয়াংসিকিয়াং এশিয়ার দীর্ঘতম নদী। দৈর্ঘ্য ৬৩৮০ কিমি। এটি তিকাতের মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে পূর্ব চীন সাগরে পতিত হয়েছে।
হোয়াংহো
হোয়াংহো এশিয়ার দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। এর অন্য নাম পীত বা হলুদ নদী (The Yellow River)। এটি কুনলুন পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে বোহাই সাগরে পতিত হয়েছে। প্রাচীন চীনে প্রায় হোয়াংহো নদী ছাপিয়ে উঠে সবকিছু বন্যায় ভাসিয়ে দিত বলে এই নদীর নাম ছিল 'চীনের দুঃখ ।
সিন্ধু নদ (Indus River)
সিন্ধু নদ তিব্বতের মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে আরব সাগরে পড়েছে। এই নদের নামানুসারে ভারতের নাম 'ইন্ডিয়া' হয়েছে। শতদ্রু (শতলজ), বিপাশা, ইরাবতী (রাজী), চন্দ্রভাগা, বিতস্তা (ঝিলাম) প্রভৃতি সিন্ধুর প্রধান উপনদী। পাকিস্তানের করাচী সিন্ধু নদের তীরে এবং লাহোর নগরী রাতী নদীর তীরে অবস্থিত ।
আমুদারিয়া (Amu Darya)
আমুদারিয়া শামীর মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে আরল, হ্রদে পতিত হয়েছে।
জর্ডান নদী
জর্ডান নদী মধ্যপ্রাচ্যের একটি নদী। সিরিয়ার মালভূমি (গোলান মালভূমি) থেকে উৎপন্ন হয়ে মৃত সাগরে (Dead Sea) পতিত হয়েছে। মৃত সাগরের ৯৫% পানি আসে জর্ডান নদী থেকে। জর্ডান নদীর প্রবাহ সিরিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর (West Bank), ইসরায়েল এবং জর্ডানসহ ৫টি দেশের ভিতর দিয়ে। খ্রিষ্টান এবং ইহুদী ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র এ নদীতে দূষণের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলেছে। জর্ডান নদীতে মাছ হয় না।
ভলগা
ভলগা ইউরোপের দীর্ঘতম নদী। ভলদাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে মধ্য রাশিয়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কাম্পিয়ান সাগরে পতিত হয়েছে।
মারি নদী (Murray River)
মারি অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘতম নদী। এটি অস্ট্রেলীয় আল্পসে উৎপত্তি লাভ করে এনকাউন্টার উপসাগরের কাছে ভারত মহাসাগরে পতিত হয়েছে। মারামবিজি এবং ডালিং মারির দুই প্রধান উপনদী। ডালিং নদীর উৎপত্তিস্থল থেকে মারি নদীর মোহনা পর্যন্ত জলপথের দৈর্ঘ্য ৩৭৫০ কিমি, যা অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘতম জলপথ।
টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস
টাইগ্রিস (আরবি নাম দাজলা) ও ইউফ্রেটিস (আরবি নাম ফোরাত) উভয় নদী তুরস্কের পর্বতমালায় (আর্মেনিয়ার উচ্চভূমি হতে) উৎপত্তি লাভ করে সিরিয়া এবং ইরাকের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। টাইগ্রিস নদীর দৈর্ঘ্য ১৮৫০ কি.মি. (১১৫০ মাইল)। ইউফ্রেটিস নদীর দৈর্ঘ্য ২৮০০ কিলোমিটার (১৭৪০ মাইল)। দক্ষিণ ইরাকের বসরার নিকট নদী দুইটি পরস্পরের সাথে মিলিত হয়েছে এবং 'শাত-ইল-আরব' নামে পারস্য উপসাগরে পড়েছে। ইরাকের বাগদাদ, মসুল শহর টাইগ্রিস নদীর তীরে অবস্থিত। ইরাকের ফালুজা, কারবালা, কুফা প্রভৃতি নগরী ইউফ্রেটিস নদীর তীরে অবস্থিত।
দানিউব
দানিউব ইউরোপের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। এটি ইউরোপ মহাদেশের অন্যতম প্রধান পরিবহন শখ। ইউরোগের প্রধান নদীগুলোর মধ্যে কেবল দানিউবই পশ্চিম-পূর্বে প্রবাহিত হয়। জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট অঞ্চলে এর উৎপত্তি। সেখান থেকে ২৮৫০ কি.মি. পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে রুমানিয়ার উপকূলে কৃষ্ণসাগরে পতিত হয়েছে।
নদীবিহীন দেশ
বাহামা, বাহরাইন, কমোরোস, কিরিবাতি, কুয়েত, মালদ্বীপ, মাল্টা, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, মোনাকো, নাউরু, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, টুভ্যালু, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভ্যাটিকান সিটি, ইয়েমেন।
বিশ্বের প্রধান শহর যে নদীর তীরে অবস্থিত
নিউইয়র্ক | হাডসন |
কুইবেক | সেন্ট লরেন্স |
লন্ডন | টেমস |
বার্লিন | স্প্রি |
প্যারিস | সিন |
রোম | টিবের |
ওয়ারস | ভিশ্চ্যূলা |
মস্কো | মস্কোভা |
দিল্লি | যমুনা |
ইয়াঙ্গুন | ইরাবতী |
টোকিও | সুমিদা |